শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
‘এডিসি হারুন স্যার নির্দোষ, আমার স্বামীই আগে মারধর করেন’ : সানজিদা

‘এডিসি হারুন স্যার নির্দোষ, আমার স্বামীই আগে মারধর করেন’ : সানজিদা

স্বদেশ ডেস্ক:

শাহবাগ থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনার পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে নিয়ে প্রশাসনের নাটকীয়তার এখন তুঙ্গে। এর মধ্যে অবশেষে মুখ খুললেন যাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত সেই সানজিদা আফরিন।

তিনি বলেন, এডিসি হারুন স্যার নির্দোষ, আমার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনই হারুন স্যারকে প্রথমে আঘাত করেছেন।

সানজিদা রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী। তিনি ৩৩তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিএমপির ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সানজিদা।

সেদিনের ঘটনা নিয়ে সানজিদা আফরিন চ্যানেল আইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন ধরে সিভিয়ার পেইনে (তীব্র ব্যথায়) ভুগছিলাম। সেদিন পেইনটা একটু বেশিই হচ্ছিল। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের (আওতা) মধ্যে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।

স্যারকে জানালে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আমি আশপাশে আছি। আমি এসে ডাক্তারের সাথে কথা বলে দিচ্ছি। এরপর স্যার (এডিসি হারুন) এলেন। আসার পর একটা ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকো টেস্ট আর ইসিজি করানো হলো।’

সানজিদা আরো বলেন, যে রুমে ইটিটি করানো হয় ঘটনার সময় আমি সেই রুমে ছিলাম। ইটিটি করানোর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আমি বাইরে হট্টগোলের শব্দ শুনি। শুনতে পাই স্যার (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন ‘ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না।’ আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে হয়তো অন্য কারো সাথে ঝামেলা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন), উনি আসলে ওখানে কী করছিলেন, কেন গিয়েছিলেন আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। ওনার সাথল আরো কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।

‘ওই সময় হারুন স্যার নিজের সেফটির (নিরাপত্তার) জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের দিকে দৌড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এতলোক ঢোকাতে তখন সেখানে একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন (বিব্রতকর পরিস্থিতি) তৈরি হয়। কারণ ইটিটি রুমে রেস্ট্রিকশন থাকে। তখন আমি শাউট (চিৎকার) করছিলাম। কারণ এই রুমে কোনো ছেলে ঢোকার কথা না।’

সানজিদা বলেন, এরপর আমার হাজবেন্ড তার সাথে থাকা লোকজনকে বললেন, এই ভিডিও কর। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সাথে থাকা লোকজনের সাথে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম। এরপর যারা ভিডিও করছে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সাথে লেগে আমার হাতেও সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না সে অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজবেন্ডের সাথে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।

‘সেই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড (এপিএস আজিজুল হক) আমার গায়ে হাত তোলেন এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও এলেন। এর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়।’

এসব ঘটনার স্থান কোথায় এবং কয়টার দিকে হয়েছে জানতে চাইলে সানজিদা আফরিন বলেন, আমার ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। এরপর রাত ৭টার দিকে স্যার (হারুন) এসেছিলেন, পরে ডাক্তারও আসেন। এরপর আমি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকি। ঘটনা ঘটেছে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চারতলার কার্ডিওলজি বিভাগে।

অসুস্থের বিষয়ে আপনার স্বামী (আজিজুল হক মামুন) জানতেন কি না জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, আমি অসুস্থ এটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু আমি যে সেদিন ডাক্তার দেখাতে যাবো তা তিনি জানতেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু কোনো করণে তা তিনি মিস করেন। অথবা ব্যস্ত ছিলেন। যেহেতু ৬ থেকে ৭ দিন ধরে আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল। যাইহোক, সবসময় তো পরিস্থিতি সেরকম থাকে না যে আমি তার সাথে শেয়ার করবো। যেহেতু আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল তাই আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে আসি।

এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে।

আহত তিন নেতা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।

এর জেরে ওইদিন রাতেই শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে মীমাংসা করেন। তবে ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দেয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877